[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- আব্দুর রহমান কুমিল্লা]
আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদের ছয় প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে এই ৬ প্রার্থী দাখিল করা হলফনামার কপি পেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। রাতে হলফনামাগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সম্পদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তার হাতেও নগদ টাকা রয়েছে কোটির উপরে। অবাক করা ব্যাপার হলো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের হাতে নগর টাকার পরিমাণ শূন্য। তবে তাঁর ব্যাংকে টাকা রয়েছে।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, প্রার্থীদের মধ্যে দুইবারের মেয়র এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা সবচেয়ে কম। তিনি শুধুমাত্র এসএসসি পাস করেছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, দলটির বিদ্রোহী মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের বিএসএস। আর স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত নিজাম উদ্দিন কায়সার বিকম পাস। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল পাস। গাড়ি নেই নিজাম উদ্দিন কায়সার, কামরুল আহসান বাবুল ও রাশেদুল ইসলামের।
স্থাবর, অস্থাবর, বাণিজ্যিক ও কৃষি জমি মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তির মালিক মনিরুল হক সাক্কু। তার কোনো ধার দেনা নেই। সাক্কুর নগদ টাকার পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২। তার স্ত্রীর নগদ টাকা আছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২০ টাকা। ব্যাংকে জমা দুই লাখ ৯৪ হাজার, স্ত্রীর ব্যাংকে জমা নয় লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৭ টাকা। বন্ড এক্সচেঞ্জ মিলিয়ে সাক্কুর টাকার পরিমাণ দুই লাখ। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৫০ লাখ ও স্ত্রীর বিনিয়োগ ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সাক্কুর একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ ও স্ত্রীর একটি জিপগাড়ি আছে। সাক্কু ও তার স্ত্রী দু’জনেরই স্বর্ণালঙ্কার আছে এক লাখ টাকা সমমূল্যের। সাক্কুর ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম আছে ৪৭ হাজার ও আসবাবপত্র এক লাখ টাকার। লালমাইয়ে ২৫০ শতাংশ ও মনোহরগঞ্জে যৌথমালিকানাধীন ২০ একর কৃষি জমি রয়েছে। স্ত্রীর নামে গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে কৃষি জমি আছে ১.২৩ একরের বেশি। সাক্কুর ঢাকায় দু’টি ফ্ল্যাট, কুমিল্লাতে ১৭টি ও নিজের বসতবাড়ির ফ্ল্যাট আছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে বসুন্ধরায় তিন কাঠা জমি, সাক্কুর নিজের স্বদেশ প্রপার্টিজে পাঁচ কাঠা জমি, বসুন্ধরায় তিন কাঠা, ১৭ শতাংশের নির্মাণাধীন ভবন, ফাতেমা জাহানার টাওয়ারে ১৬৫০, ১৯৫০, ২৫৮, ১৮৪০, ১৬৫০ বর্গফুটের দোকান আছে। দোকান আছে সাত্তার খান কমপ্লেক্সেও। স্ত্রীর নামে রেসকোর্সে ৭২৫৬ শতাংশের রেস্ট হাউজ ও রেস্টুরেন্ট আছে। ধানমণ্ডিতে তিনটি দোকান আছে স্ত্রীর নামে। সাক্কুর বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি মামলা চলমান আছে। ১০টি ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে তার।
এদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ১০ হাজার, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ আয় পাঁচ লাখ, ব্যবসায় ১৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০, রিফাতের ওপর নির্ভরশীলদের আয় চার লাখ ৬৬ হাজার ৭৬২ ও সুদ বাবদ আয় তিন লাখ তিন হাজার ৯৫ টাকা। রিফাতের ব্যাংকে জমা আছে ছয় লাখ ১২ হাজার ও স্ত্রীর জমা আছে ৩৩ হাজার টাকা। পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকা। রিফাতের এক কোটি টাকা মূল্যের একটি জিপ ও ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি কার আছে। স্বামী-স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার আছে ৫০ ভরি। তাদের ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের। আসবাবপত্র আছে তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকার। অন্যান্য ব্যবসার মূলধন ছয় লাখ টাকা। রিফাতের ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, তার স্ত্রীর ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি আছে। যৌথ মালিকানায় ৩০ লাখ টাকার সম্পত্তি আছে ফেনী গ্রান্ড টাওয়ারে। ঢাকা ও কুমিল্লায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের দু’টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে তার।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সুদ থেকে আয় আট হাজার ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের সুদ থেকে আয় সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার নগদ টাকার পরিমাণ দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা তিন লাখ ১৭ হাজার ও তার স্ত্রীর জমা সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার ও তার স্ত্রীর যথাক্রমে ৫২ লাখ ও ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি আছে। তার ও তার স্ত্রীর ৭৫ তোলা স্বর্ণালঙ্কার আছে। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে চার লাখ টাকা মূল্যের। কৃষি জমি আছে ৭৭.৬৬ শতাংশ, ঢাকায় ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ও লালমাইয়ে ১.১২ একর জায়গা আছে ইমরানের। তার বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি মামলা চলমান। তিনটি ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।
বিএনপিপন্থী প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা চলমান। ছয়টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। তার চাকরি থেকে বাৎসরিক আয় আট লাখ ৪০ হাজার টাকা, তার নগদ টাকা আছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে তিন লাখ দুই হাজার ও কোম্পানির শেয়ার আছে ৪০ হাজার টাকার। তিনি ও তার স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার আছে ৫০ তোলা। তাদের আট লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও আসবাবপত্র রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। শিক্ষকতা পেশা থেকে তার বাৎসরিক আয় তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা। তার বাসায় সামান্য কিছু আসবাবপত্র আছে। তার ৮.২৫ শতাংশ অকৃষি জমি ও একটি বাড়ি আছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলের বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি মামলা চলমান। তার ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় আড়াই লাখ টাকা। নগদ টাকা আছে তিন লাখ ২০ হাজার। বিয়ের উপহারস্বরূপ স্বর্ণ আছে ৩০ ভরি ও প্রায় তিন লাখ টাকার অন্যান্য সামগ্রী আছে তার। তার তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যে অকৃষি জমি আছে। এছাড়াও ১৭৬ শতাংশ তিনি ও ১৯৬ শতাংশ জায়গায় তার ওপর নির্ভরশীলদের ভবন তৈরি হচ্ছে।