[ম্যাক নিউজ রিপোর্ট:- কুমিল্লা প্রতিনিধি]
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) তালিকাভুক্ত কুমিল্লার বেশ কিছু ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান জমির মালিকদের পারিবারিক দ্বন্দ্বে বিপাকে পড়েছেন।
এইসব দ্বন্দ্বের জেরে একাধিক মামলা হওয়ায় বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে,এতে করে প্রকল্পে বুকিং ও বিনিয়োগ করা নানা পেশাজীবীর ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে।
ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন,ব্যাক্তি মালিকানা দ্বন্দ্বে মজুমদার কামাল টাওয়ার,দেলোয়ার রূপায়ান টাওয়ার,উইকনসহ বেশকয়েকটি কোম্পানি ব্যবসায়িক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ইনভেস্ট করে বিপাকে পড়ছেন।
সর্বশেষ নগরীর বাদুরতলা এলাকায় পুরাতন চৌধুরী মার্কেটের সম্পত্তি নিয়ে ভাই ও বোনের দ্বন্দে থমকে গেছে ডেভেলপারের নির্মাণ প্রকল্পের কাজও। জমির মালিকের উত্তরাধিকার সত্ত্বে হুমায়ুন মাজহার চৌধুরী,জাহিদ মাজহার চৌধুরী,জাহাঙ্গীর মাজহার চৌধুরী ও বোন ফাতেমা ফেরদৌসের মাঝে বিরোধ এবং লিগ্যাল নোটিশের কারন বলে জানা গেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন থেকে জমিতে ২০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্রথম নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সংশোধিত নকশায় ২০১৯ সালে ১৩ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি মেলে। কিন্তু জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আইনি জটিলতা এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ডেভেলপার কোম্পানি নির্মাণ কাজ তখন শুরু করতে পারেনি।
পূর্বের ডেভেলপার কোম্পানিটি কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে আরবিট্রেশন মামলা দায়ের করেন। এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, জমির মালিকপক্ষের ভাইয়েরা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে প্ল্যানটি অবৈধভাবে বাতিল করে এবং নতুন নকশার অনুমোদন নেয়। যাহা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
জমির মালিক এম এইচ চৌধুরী সাহেব।তিনি ৩০/০৭/২০০৯ইং তারিখে আলহাজ এম এইচ চৌধুরী ফাউন্ডেশন নামে জমিতে একটি মসজিদ,মাদ্রাসা,এতিমখানা ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের জন্য ফাউন্ডেশন রেজিষ্ট্রি ট্রাস্টি দলিল দান করেন।তিনি উক্ত রেজিষ্ট্রি দলিলে ৫৪ শতক ভূমির আন্দরে সেমি বেইজমেন্ট মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ইসলামী কমপ্লেক্সের জন্য দান করে গিয়েছেন, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে একত্রে সম্পাদনের জন্য ওসিয়ত করে গিয়েছেন। পরবর্তীতে তিন ভাইয়ের টাকার জরুরী প্রয়োজনে ৫৪ শতক ভূমি থেকে ৬ শতক ভূমি অন্যত্র বিক্রি করিয়া দেন। এই জমির ওপর মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য একটি ফাউন্ডেশন থাকায় ধর্মীয় ও সামাজিক জটিলতা যুক্ত হয়েছে। ফলে ডেভেলপার কোম্পানিটির মালিক নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানায়।
জমজম ডেভেলপারের মালিক মোতালেব বলেছেন, হুমায়ূন ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই ও জাহিদ ভাই ও উনাদের বোনের সাথে আমাদের ৪৮ শতক জায়গার চুক্তি হয়েছে। নকশাও হয়ে গিয়েছিল সেখানে।কিন্তু অদৃশ্য কোন এক কারণে তারা তিন ভাই আমার কাজ বন্ধ করতে চায়৷ তারা চায় আমি যাতে এখানে কাজ না করি। পরে আমি এখানে কাজ ছেড়ে দেই। কিন্তু আমি সাইনিং বাবদ যে টাকা দিয়েছিলাম সেটা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার মাঝে এক টাকাও ফিরে পাইনি। আমি আমার পাওনা টাকা পাইতে চাই। আমি সামাজিকভাবে বসে টাকাটা পেতে চেয়েছিলাম, সেটা যদি না পাই তাহলে আমার আইনের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
অভিযোগকারী বোন ফাতেমা ফেরদৌস চৌধুরী বলেছেন, আমার বাবা এই জায়গা ৫৪ শতক ভূমির আন্দরে সেমি বেইজমেন্ট মসজিদ,মাদ্রাসা,এতিমখানা, ইসলামী কমপ্লেক্সের জন্য এম এইচ চৌধুরী ফাউন্ডেশন নামে একটি রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে দান করে গেছেন,এবং আমার তিন ভাই ও আমি একত্রে প্রজেক্ট ডেভেলাপ করার জন্য ওয়িসত করে গেছেন। এবং তার ভিত্তিতে পূর্বের একাধিক ডেভেলপার কোম্পানি একত্রে ডিড করেছিলেন। কিন্তু আমার ভাইয়েরা সেই ওসিয়ত অবজ্ঞা করে নতুন একটি ডেভেলপারের সাথে আমাকে বাদ দিয়ে চুক্তি করেছে। আমি এর সুবিচার পেতে চাই। আমি আমার বাবার ওসিয়ত পরিপূর্ণ করতে চাই।
উইকন প্রোপাটিজ লিমিটেড এর জিএম নাজমুল হোসেন বলেন, আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে ভূমি বাণিজ্য নিয়ে যে অভিযোগগুলো করেছেন সেগুলো ভিত্তিহীন। আমরা এই বিষয়গুলো সুক্ষভাবে অনুধাবন করেই এই অবস্থানে এসেছি। আমরা আশা করি আমাদের চলার পথে এমন কিছু ঘটবে না। আমাদের আগামীর পথ হবে মসৃণ ও আমরা একটি সফল উইকন আর্কাইভ মানুষদেরকে দিতে পারব এটাই আশা করি। এ বিষয় নিয়ে যদি কোন মামলা হয় আমরা মামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত।
অভিযোগের বিষয়ে হুমায়ন মাজহার চৌধুরী বলেন, প্রথমত বলতে চাই আমার বাবা যে জায়গাটা রেখে গেছেন সেটা আমাদের তিন ভাইকে দিয়ে গেছেন। পাশাপাশি তিনি একসাথে এই মসজিদের জায়গাটিও দান করে গিয়েছেন। এর মধ্যে আমাদের কিছু জায়গা প্রয়োজন ছিল সেগুলো আমরা ছেড়ে দিয়েছি। আর বাকি ৪২ শতক জায়গায় মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ ইসলামিক কার্যক্রমগুলো চলবে। এই জায়গার সাথে আমার বোন কোনভাবেই সম্পৃক্ত না। যেহেতু সে নাই তারপরেও সে কেন এসব করছে আমি জানিনা।
স্থানীয় একাধিক মুসুল্লিগনের সাথে কথা জানা যায়, চৌধুরী সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় সাধারণ মানুষ ওনার পুরনো মসজিদে নামাজ আদায় করতেন, বর্তমানে মুসল্লীরা একত্রে বেশি লোক নামাজ আদায় করতে পারে না, চৌধুরী সাহেবের ইচ্ছা ছিলো এখানে নির্মিত ভবনে একটি বড় মসজিদ হবে। কিন্তু, সেটা কেন এখন ছোট করে করা হচ্ছে, তা আমরা জানতে চাই? আমরা চাই চৌধুরী সাহেবের ইচ্ছা পূরণ হোক।
নগরবিদ আহসানুল কবির বলেছেন, উন্নয়ন, নগরায়ন এগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয় এবং সময়ের দাবি। উঁচু দালান, ইমারত তৈরী হবে এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে এখানে ডেভেলপাররা যদি আইন মেনে চলেন এবং যারা ক্রেতা রয়েছেন তারা যদি একটু সচেতন হন তাহলে আর কোন বিরম্বনা করতে হবে না। যারা গ্রাহক রয়েছেন তাদের উচিত যে কোন ফ্ল্যাট কিংবা দোকান কিনার সময় সেগুলোর দলিলগুলো ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যে সেগুলো ঠিক আছে কিনা। মালিকানা দ্বন্দ্ব নিয়ে কেউ যদি ফ্ল্যাট কিংবা দোকান হস্তান্তর করেন, তাহলে আমি বলবো এটি একটি অনৈতিক কাজ।